ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,রায়না: একটা সময় ছিলো যখন সিপিএম আর পুলিশের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে পূর্ব বর্ধমানের রায়না ১ ব্লকের হিজলনা গ্রামের মানুষ প্রায় প্রতিদিন যাতায়াতের রাস্তা কেটে দিতো। যাতে কোনো গাড়ি গ্রামে ঢুকতে না পারে। কিন্তু তারপর রাজ্যে পালা বদল হয়েছে, শাসকেরও পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে উন্নয়নে জোর দিয়েছে মা, মাটি, মানুষের সরকার তৃণমূল কংগ্রেস। তারপর দু দুবার বিরোধীদের পর্যুদস্ত করে এই সরকার সাধারণ মানুষের ভোটে জিতে ক্ষমতায় রয়েছে এই রাজ্যে।


ফের ২০২৬ এ ভোট। আর তার আগে রায়নায় ফের গ্রামের রাস্তা কেটে প্রতিবাদ জানালো আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামের শতাধিক মানুষ। যখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগামী চারদিন ধরে বিশ্ব আদিবাসী দিবস পালনের উদ্যোগ নিয়েছেন, সেইসময় খোদ একটা আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামের একাংশ মানুষ তাদেরই এলাকার অনুন্নয়নের প্রতিবাদে রাস্তা কেটে বিক্ষোভ দেখালেন। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় জোর আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে জেলা জুড়ে।
ঘটনাটি ঘটেছে রায়না ১ ব্লকের নতু পঞ্চায়েতের রামানন্দপুর গ্রামের আদিবাসী পাড়ায়। যদিও এবার রাস্তা কেটে প্রতিবাদ দেখানোর কারণ বিরোধীদের জন্য নয়, বরং খোদ শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধেই। কারণ ২০১১ সালের পর থেকে এই গ্রামের আদিবাসী পাড়ায় কোনো উন্নয়নই হয়নি বলেই গ্রামবাসীদের অভিযোগ। অভিযোগের তীর তিন তিনবার সাধারণ মানুষের ভোটে জিতে আসা স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান কার্তিক সানার বিরুদ্ধে। অভিযোগ, প্রতি বর্ষাতেই গ্রামের রাস্তা কার্যত চলে যাচ্ছে জলের তলায়। নেই কোনো পরিকল্পিত নিকাশি ব্যবস্থা। গত দু মাস ধরে টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত চাষাবাদ। একাধিক মাটির বাড়ি প্রায় ভেঙে পড়ার মুখে। ছেলে মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না। অসুস্থ রোগীদের চ্যাংদোলা করে কিংবা খাটিয়া করে এক হাঁটু জল পেরিয়ে গ্রাম থেকে নিয়ে মূল রাস্তায় এসে তবেই গাড়ি করে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছেন গ্রামবাসীরা।

প্রসঙ্গত শ’দেড়েক ঘরের বসবাস এই গ্রামে। মূলত চাষাবাদই এই গ্রামের জীবিকা। আর এই বর্ষায় তাদের চাষ প্রায় একপ্রকার শেষ। গ্রামের একটা অংশ কার্যত জলমগ্ন। গ্রামের জল বেরোনোর কোনো ব্যবস্থাই নেই। আর তাই বুধবার আদিবাসী পাড়ার মানুষ একত্রিত হয়ে রাস্তাই কেটে দিলেন। যাতে একদিকের জল অন্যদিকে বয়ে যেতে পারে। একই সাথে শাসক দলের প্রতি বিস্তর ক্ষোভ দেখিয়ে ভোট বয়কটেরও হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন। যদিও রায়না ১ ব্লকের সভাপতি বামদাস মন্ডল জানিয়েছেন, ‘ বৃহস্পতিবার অর্থাৎ আগামীকালই তিনি রামানন্দপুর গ্রামে যাবেন। প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করবেন। তবে তিনি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই এই গ্রামে কালভার্ট ও পাকা রাস্তা তৈরি করার জন্য সাংসদ তার তহবিলের টাকা অনুমোদন করেছেন। জেলাপরিষদের সভাধিপতি কেও পরিস্থিতির বিষয়ে জানানো হয়েছে। খুব শীঘ্রই গ্রামের অবস্থা উন্নয়নের কাজ শুরু হয়ে যাবে।’









