ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: রাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় কলকাতার পর জেলাস্তরে নতুন নজির সৃষ্টি করলো বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সুপার স্পেশালিটি উইং অনাময় হাসপাতাল। ওপেন সার্জারি না করেই হার্টের আয়োর্টিক ভালভ প্রতিস্থাপন করলেন চিকিৎসকেরা। এমনকি সমস্ত চিকিৎসা বাবদ বিপুল পরিমাণ খরচ এক্ষেত্রে রাজ্যে সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তর বহন করেছে। রোগী কে চিকিৎসা বাবদ কোন খরচ বহন করতে হয়নি। প্রসঙ্গত এর আগে পিজি হাসপাতালে এই ধরনের সার্জারি চারবার হয়েছে। জেলায় এই প্রথম। স্বাভাবিকভাবেই জটিল এবং ব্যয়বহুল টাভি (TAVI) অর্থাৎ Transcatheter Aortic Valve Implantation সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় খুশির জোয়ার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল জুড়ে।


বুধবার এক সাংবাদিক সম্মেলন করে এই ঘোষণা করেন বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, এখনো পর্যন্ত পিজি হাসপাতালে চারটি টাভি কেস সফলভাবে হয়েছে। তারপরই এই চিকিৎসা করে নজির তৈরি করল বর্ধমান। এই গোটা প্রক্রিয়ায় খরচ বাবদ ১৩ লক্ষ টাকা স্বাস্থ্যভবনের মাধ্যমে খরচ করা হয়েছে, রোগীর পরিজনদের এক টাকাও খরচা করতে হয়নি।
জানা গিয়েছে, বীরভূমের নলহাটি থানার বাসিন্দা অমীয় কুমার মন্ডল (৭১) দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্ট এবং বুকের ব্যাথায় ভুগছিলেন। গত ৩ তারিখ তাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের সুপার স্পেশালিটি উইং অনাময় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখেন তার হার্টের আয়োর্টিক ভালব্ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সেটি প্রতিস্থাপন করতেই হবে। বুধবার অনাময়ে সাংবাদিক সম্মেলনে হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান দীপঙ্কর ঘোষ দস্তিদার বলেন, ‘এই রোগ হলে সাধারণত ওপেন হার্ট সার্জারী করতেই হয়। কিন্তু, তারা অনেকদিন ধরেই ‘টি এ ভি আই’ নিয়ে চিন্তাভাবনা করছিলেন। সেই অনুযায়ী বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। দেখা যায়, এই ভালব্ টির দাম ১০ লক্ষ টাকা। সঙ্গে আনুষাঙ্গিক খরচা আরও প্রায় তিন লাখ। গোটা বিষয়টি স্বাস্থ্যভবনের নজরে আনা হয়। রাজ্য সরকারের সবুজ সংকেত পেয়ে ১৩ আগস্ট রোগীর অস্ত্রোপচার করা হয়।
এক্ষেত্রে পায়ের ধমনী দিয়ে বুকের মধ্যে নল পাঠিয়ে এই ভালব্ পরিবর্তন করা হয়। বুকের কোনো অংশ না কেটে এই ভালব্ প্রতিস্থাপন করে কার্যত অসাধ্য সাধন করেছেন অনাময় হাসপাতালের চিকিৎসকরা।’ বুধবার অনাময় হাসপাতালের সাংবাদিক সম্মেলনে ছিলেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়রাম হেমব্রম, অতিরিক্ত জেলাশাসক প্রসেনজিৎ দাস, বর্ধমান হাসপাতালের সুপার তাপস ঘোষ, অনাময় হাসপাতালের সুপার শকুন্তলা সরকার, বিধায়ক খোকন দাস সহ অন্যান্যরা৷ বর্ধমান হাসপাতালের সুপার তাপস ঘোষ বলেন, ‘আমাদের কার্ডিওলজি বিভাগ শুধু রাজ্য নয়, দেশের অন্যতম। এটা তার প্রমাণ। পাশাপাশি এই ধরনের ব্যয়বহুল একটা কর্মকাণ্ড করতে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর যেভাবে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাতেও তারা কৃতজ্ঞ। তাই রোগীর পরিবারকেও এতো ব্যয়বহুল চিকিৎসায় এক টাকাও খরচা করতে হয়নি।
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে ছিলেন রোগী অমিয় কুমার মন্ডল এবং তার স্ত্রী মঞ্জু মন্ডল। মঞ্জু মন্ডল বলেন, ‘স্বামী প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। চিকিৎসার জন্য তাদের সঞ্চয়ের অনেকটাই শেষ। কিন্তু বর্ধমান অনাময় হাসপাতালে এসে তারা ভগবানের সাক্ষাৎ পেয়েছেন। কোন টাকা খরচা না করে এই জটিল, বিরল অস্ত্রপচার করে চিকিৎসকরা স্বামীকে নতুন প্রাণ দিয়েছেন।’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারীক জয়রাম হেমব্রমও গোটা টিমকে এই কাজের জন্য শুভেচ্ছা অভিনন্দন জানান এবং রাজ্য সরকারের ভূমিকার ভুয়সী প্রশংসা করেন।









