ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক, বর্ধমান: একটি বিশ্ববিদ্যালয় কেবল পাঠশালা নয়—তা সময়ের প্রতিচ্ছবি, চেতনার পাঠশালা। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্যসমাপ্ত বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেন তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সেখানে যাঁরা নিঃশব্দে আলো ছড়ালেন, তাঁদের মধ্যে অগ্রভাগে রইল ইংরেজি বিভাগ। বিভাগীয় স্টল প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান এবং ওয়াল ম্যাগাজিন বিভাগে তৃতীয় স্থান অর্জনের মধ্য দিয়ে তারা জানিয়ে দিল—সৃজনশীলতা, অনুভব, এবং সাংগঠনিক দূরদৃষ্টি আজও শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে বহমান।

এই বছরের ইংরেজি বিভাগের স্টল ছিল এক অভিনব চিন্তার দ্যুতি। থিম—”Hope” (আশা)। এক শব্দে যে কত শত গল্প, কত শত স্বপ্ন, কত অগণন অশ্রু মুছে ফেলার সাহস—তা যেন ফুটে উঠেছিল তাঁদের প্রতিটি সাজসজ্জায়, প্রতিটি কনসেপ্টে। সাহিত্যের আলোকে, জীবনবোধের গভীরতা নিয়ে এই প্রদর্শনী যেন বলে উঠেছিল—মানুষ হার মানে না, মুছে যায় না তার স্বপ্নের রেখা। যে সময়ের মধ্যে আমরা চলেছি, তার পটভূমি আশঙ্কায় আচ্ছন্ন—পাহেলগাঁওয়ে রক্তাক্ত জঙ্গি হানা, উত্তরাখণ্ডের প্রবল বন্যা, পুনের সেতু ধস, কলকাতার বুকে বিমান ভেঙে পড়ার ঘটনা কিংবা আন্তর্জাতিক দ্বন্দ্বে চিরকালীন অনিশ্চয়তা—সব মিলিয়ে যেন নিঃশ্বাস নিতে চায়নি সময়। ঠিক তখনই, এই ইংরেজি বিভাগের ক্ষুদ্র স্টল যেন এক সাহসী উচ্চারণ করে উঠল—“তবু আশায় বাঁচে মানুষ”।
জন লেননের কালজয়ী পঙ্ক্তি, “You may say I’m a dreamer, but I’m not the only one”
ছিল তাদের প্রেক্ষাপটের অন্যতম মর্মবাণী। যেন গোটা প্রদর্শনী জুড়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল—স্বপ্ন দেখার অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া যায় না। স্টলের নান্দনিকতা, গঠনরীতি ও সাহিত্যনির্ভর চিত্রায়ণে এমন এক জগৎ তৈরি হয়েছিল, যেখানে প্রতিটি দর্শক শুধু দেখেননি—অনুভব করেছেন। কখনও চিত্রকলায়, কখনও কবিতার স্তবকে, আবার কখনও নীরব আলোকসজ্জার মধ্যে ফুটে উঠেছিল মানবিকতার দীপ্ত প্রহর। ওয়াল ম্যাগাজিন বিভাগেও শিক্ষার্থীরা ছাপ ফেলেছেন চিত্র ও ভাষার অপূর্ব মেলবন্ধনে। তাঁদের রচনায় উঠে এসেছে আত্মজিজ্ঞাসা, প্রতিবাদ, প্রকৃতি, প্রেম ও প্রত্যয়—সময়ের নানা স্বরলিপি। অবশেষ বিচারকদের মুগ্ধ করে, এই সৃষ্টিগুলো পেয়েছে যোগ্য স্বীকৃতি।
ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপকেরা বলেন, “আমাদের ছাত্রছাত্রীরা কেবল পড়াশোনায় নয়—চিন্তায়, ভাবনায় এবং নির্মাণে সত্যিই অসাধারণ। ‘আশা’ শুধু একটা থিম নয়, এটা এক জীবনদর্শন।” ছাত্রছাত্রীদের চোখে-মুখে খেলা করছিল গর্ব আর আনন্দের ছায়া। বিভাগেরই এক শিক্ষার্থী দেবরাজ সাহা জানান, “এই প্রদর্শনী শুধু প্রতিযোগিতা নয়—আমাদের চেতনার একটা সম্মিলিত জবানবন্দি। আমরা বিশ্বাস করি—ভবিষ্যতের আলো, আঁধার ছুঁয়ে হলেও আসবেই। এই সাফল্য শুধু একটি বিভাগের নয়—এ এক প্রতিষ্ঠানিক ঐতিহ্যের জয়গাথা। সাহিত্য, শিল্প এবং মানবিক উপলব্ধির অনুপম সম্মিলনে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যায় নিঃসন্দেহে স্থান পাবে এক বিশেষ স্মারকচিহ্ন হিসেবে।”









